সফলতার চাবিকাঠি - raselscb

728x90 AdSpace

Trending
Powered by Blogger.

অন্যান্য, OTHER

Loading...
Thursday, December 31, 2015

সফলতার চাবিকাঠি


তুফান আসে যেন তার ধ্বংসযজ্ঞে সব ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ঢেউ আসে যেন পাল তোলা নায়ের মাঝিরা কূলে ভিড়তে পারে। বিজলি চমকায় যেন জমির বুক চিরে চারা গজিয়ে ওঠে ধীরস্থিরভাবে আসন গাড়তে পারে। এসবের ধ্বংসলীলা ও চরম ভীতিকর পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে, মাঝে মাঝে মনে হয় এমন মহা তা-বে সৃষ্টিকুলের এক বিন্দুও বুঝি আর অবশিষ্ট থাকবে না। কিন্তু তার স্থায়িত্ব খুবই স্বল্প।
তুফান আসে যেন তার ধ্বংসযজ্ঞে সব ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ঢেউ আসে যেন পাল তোলা নায়ের মাঝিরা কূলে ভিড়তে পারে। বিজলি চমকায় যেন জমির বুক চিরে চারা গজিয়ে ওঠে ধীরস্থিরভাবে আসন গাড়তে পারে। এসবের ধ্বংসলীলা ও চরম ভীতিকর পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে, মাঝে মাঝে মনে হয় এমন মহা তা-বে সৃষ্টিকুলের এক বিন্দুও বুঝি আর অবশিষ্ট থাকবে না। কিন্তু তার স্থায়িত্ব খুবই স্বল্প।
মানুষের ব্যক্তিগত এবং সামষ্টিক যাপিত জীবনেও মাঝে মাঝে এমন ঝড়-তুফানের দেখা মেলে। এতে মন-মস্তিষ্ক প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। হাত-পা নিস্তেজ হয়ে আসে। অথচ প্রকৃতপক্ষে এটা তার জন্য পরীক্ষার কয়েক খ- মুহূর্তের সমষ্টিমাত্র। কিছু সময়ের জন্য যদি সে অটল থাকতে পারে, হিম্মত হারিয়ে যদি বিচ্ছিন্ন না হয়, মনের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে যদি আহম্মকের মতো পা না বাড়ায়; তাহলে এ সমস্যাই তাকে নিয়ে যাবে সমাধানের রাজপথে। এ মুসিবতই তাকে দাঁড় করাবে প্রশান্তির ফল্গুধারায়। সাময়িক এ ধৈর্যের বিনিময়ে উচ্চতার সুপ্রান্ত সীমায় পরতে পারবে সম্মানের তাজ।
মহাগ্রন্থ আল কোরআন মোমিনকে এমন সময়ে দুইটি বিষয়ে নির্দেশ দেয়। এক. সবর ও দুই. নামাজ। সবর কী? সাধারণত মানুষ মনে করে থাকে, কোনো প্রিয় ও নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুতে কান্নাকাটি করা থেকে বিরত থাকার নাম 'সবর'। অথচ প্রকৃতপক্ষে সবরের সীমা বহু উঁচু। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে তার সম্পৃক্ততা। সবর অর্থ ধৈর্যধারণ করা। ধৈর্যশক্তি অনেক বড় গুণ এবং ধৈর্যহীনতা অনেক বড় দোষ। যার ভেতর ধৈর্যশক্তি বিদ্যমান, তার মধ্যে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার যোগ্যতা থাকে। সে বিরুদ্ধবাদীদের হীনচক্রান্ত রোধে প্রভাবক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়। হজরতে আম্বিয়া (আ.) দের যেহেতু সর্বাধিক বিপরীত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, তাই তাদের আল্লাহ তায়ালা অফুরন্ত ধৈর্যশক্তি, ক্রোধ হজম ও বিরোধীদের নির্যাতন সহ্য করার যোগ্যতা দান করেছিলেন।
আমি এটা বোঝাতে চাচ্ছি না যে, সবর মানে হীনম্মন্যতা অবলম্বন করা বা হেরে যাওয়ার মানসিকতা লালন করা। বরং উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রজ্ঞার হাতিয়ার হাত থেকে ছুড়ে ফেলা যাবে না। স্বীয় জজবা ও জোশ অপাত্রে ব্যয় করা থেকে বিরত থাকতে হবে। রাসুল (সা.) এর পবিত্র জীবনের পরতে পরতে এমন অসংখ্য উপমা ছড়িয়ে আছে।
হুদাইবিয়ার সন্ধির প্রাক্কালে মক্কাবাসীর পক্ষ থেকে আনুমানিক ৪০ জনের একটি বাহিনী মুসলমানদের ওপর হামলা করতে উদ্যত হয়। এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, তারা জানবাজি রেখেই এমন হত্যাযজ্ঞ চালাতে চেয়েছিল, যার প্রকৃত শাস্তি হতো তারা যে উদ্দেশ্যে এসেছে তা পূর্ণ করার মাধ্যমে, অর্থাৎ কতল করা হলে অথবা নূ্যনতম তাদের বন্দি করে রাখা যেত। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের সেখানেই থাকতে বললেন। কেননা যদি এমন করা না হতো, তাহলে নিশ্চিত যুদ্ধের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে উঠত। যে পক্ষের হোক জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হতো। কিন্তু এতে করে আরবদের মাঝে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ আরও বৃদ্ধি পেত। কেননা তারা হেরেম শরিফকে খুবই সম্মান করে। তারা ভাবত, মুসলমানরা এখন হেরেমের সম্মানও নস্যাৎ করতে শুরু করেছে। এটা হুশকে জোশের ওপর এবং জজবা ও সাহসকে প্রজ্ঞা ও সহিষ্ণুতার ওপর প্রাধান্য দেয়ার এক প্রোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
রাসুল (সা.) এর পবিত্র জীবন গজওয়ায়ে বনু মুসতালিকসহ এমন অসংখ্য ঘটনাপ্রবাহে টইটুম্বুর, যেখানে হিকমত, প্রজ্ঞা ও ধৈর্যের অনন্য উপমা তিনি দেখিয়ে গেছেন বিশ্বকে। বর্তমান সময়ে মুসলমানদের উচিত, সে সময়কার পরিস্থিতিকে উপলব্ধি করা। আমরা যদি ক্রোধ আর জোশের জোয়ারে ভেসে কয়েক টুকরো পাথর নিক্ষেপ করি, তাহলে অবশ্যই এতে অন্যের কোনো ক্ষতি হবে না, কিন্তু এর পরিণতিতে আপনার জন্য খুবই আপদসঙ্কুল পরিস্থিতি ও ভয়ঙ্কর ভবিষ্যৎ অপেক্ষমাণ। কোনো মানুষ সে যত বড় অত্যাচারী আর অনাচারী হোক না কেন, তার ইচ্ছে জাগে যদি এ অন্যায়, অনাচার ও অত্যাচারের অনুকূলে প্রভাবক কোনো হেতু, যুক্তি বা প্রমাণ পাওয়া যেত! তা যত হীন বা দুর্বল হোক না কেন! শয়তানও তার ওপর নির্দেশিত কর্মের বিরোধিতার যুক্তি উপস্থাপন করেছিল, আদম (আ.) সৃষ্টির উৎস আমার সৃষ্টির উৎস থেকে নিম্ন ও হীন। এ যুক্তিতে সে আদম (আ.) কে সেজদা করল না।
আমরা যদি অধৈর্য হয়ে ক্রোধে আক্রান্ত হয়ে কোনো সাধারণ অন্যায়ও করে ফেলি, তাহলে যারা বুকে বিদ্বেষ ও শত্রুতা পোষণ করে, তারা এতে আরও বেশি আগ্রাসী হয়ে ওঠার বৈধতা পাবে। নিজেরাই যেন আমরা তাদের হাতে বিদ্বেষের হাতিয়ার তুলে দিলাম। পরে মানুষ বাস্তব ঘটনা, এর নেপথ্য কাহিনী এবং এর সূত্রপাতের দিকে তাকাবে না। বরং বাহ্যিক ঘটনার আলোকে মানুষ এর ভালোমন্দ যাচাই করবে এবং মুসলমানকে একযোগে সবাই আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। সুতরাং এমন পরিস্থিতিতে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করে পা ফেলা চাই। উদাহরণস্বরূপ, আফগানিস্তানে মার্কিন অন্যায় আগ্রাসনের দিকে চিন্তা করুন, আমরা যদি সরকারের কাছে অনুরোধ করি যে, এহেন পরিস্থিতিতে মজলুমদের পক্ষে থাকুন অথবা নূ্যনতম তাদের ওপর হামলা থেকে বিরত থাকুন, তাহলে এটা একটি যুক্তিপূর্ণ ব্যাপার হবে। অনুরূপভাবে পশ্চিমা এবং মুসলিম দেশগুলোর দূতাবাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাদের অভিমত পেশ করতে পারি। কিন্তু আমরা আমাদের উদ্দেশ্য সাধনে যদি রাস্তায় বেরিয়ে আসি, তাহলে এতে তো আমাদের উদ্দেশ্য বিন্দু পরিমাণও পূরণ হবে না; উল্টো দলপূজারি শক্তিগুলো এতে আরও টনিক খুঁজে পাবে এবং পরবর্তী দৃশ্যপট আমাদের জন্য কতটা ক্ষতিকর হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্তির দ্বিতীয় হাতিয়ার 'সালাত'। সালাতের মূল অর্থ নামাজ। নামাজ এমন এক ইবাদত যা দ্বারা মানুষ আল্লাহর সামনে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সঁপে দেয়ার প্রয়াস পায়। কপাল থেকে নিয়ে পা পর্যন্ত প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আল্লাহর বন্দেগিতে লিপ্ত হয়ে যায়। এজন্য নামাজ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনের এক অনন্য সোপান। অর্থাৎ সমস্যাসঙ্কুল পরিস্থিতিতে মানুষ তার প্রতিপালকের দিকে সম্পূর্ণভাবে মনোনিবেশ করবে। সে আল্লাহর চৌকাঠে তার ললাট ঠেকিয়ে বলবে, আমি মুখাপেক্ষী আপনি কারও মুখাপেক্ষী নন, আমি ভিক্ষুক আপনি দাতা, আপনি এ হাত খালি হাতে ফিরিয়ে দেবেন না। আল্লাহর শক্তি অফুরান। আমরা তো দিবানিশি আল্লাহর কুদরত দেখে থাকি, কিন্তু এ কুদরত বস্তুজগতের পর্দায় ঢাকা। কখনও কখনও আল্লাহর শক্তি আসবাবের করতলমুক্ত হয়ে দৃশ্যমান হয় মানুষের দৃষ্টির সীমানায়।
চিন্তা করুন, যখন মুসা (আ.) এবং বনি ইসরাইল গোত্রের পেছনে ফেরাউনের অগণিত সৈন্য ধাওয়া করছিল, মানুষ দেখে ভাবছিল, এ বাহিনী আজ মুসলমানদের ধুলোয় ধূসরিত করে ছাড়বে। কিন্তু আল্লাহর কাছে সিদ্ধান্ত ছিল ভিন্ন রকম। তাদের এ সমবেত বাহিনী নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনল। বদর যুদ্ধের প্রাক্কালে বড় বড় রণসাজ আর বীরের বেশে মক্কা থেকে কাফেররা এসেছিল। রাসুল (সা.) তাদের ব্যাপারে বলেছিলেন, মক্কা তাদের কলিজার টুকরোগুলো তোমাদের সম্মুখে ঢেলে দিয়েছে। তাদের জোশ আর উন্মাদনা দেখে মানুষ ভাবতে লাগল, এরা তো মদিনাকে টুকরো টুকরো করে ছাড়বে। কিন্তু কার জানা ছিল যে, আল্লাহ তাদের নিশ্চিহ্ন করার জন্যই এখানে সমবেত করেছেন। এতে মক্কাও তার জেদি নেতাদের খপ্পর থেকে বাঁচতে পারবে। আর ভবিষ্যতে মক্কাবাসীর জন্য হকের দাওয়াত গ্রহণ করা সহজতর হবে। অবশেষে আল্লাহর সিদ্ধান্ত ঠেকানোর কি কল্পনাও করা যায়?
অতএব, আমাদের আল্লাহর দিকে রুজু হতে হবে এবং তার খাজানা ও শক্তি দ্বারা সাহায্য নিতে হবে। তখন আমাদের জন্য কোনো কিছু আর বাধা হয়ে থাকবে না। আর কোনো বিষয় অসম্ভব হয়েও পড়ে থাকবে না। তিনি চাইলে মুসলিমবিরোধী সব অপশক্তিকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতে পারেন। আল্লাহ তার দুর্বল বান্দাদের কায়মনোবাক্যে চাওয়াকে এজন্য অধিক পছন্দ করেন যে, তারা আল্লাহর খাজানা থেকে চায়। এ সবর এবং আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন সব সফলতার চাবিকাঠি।
মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ
উর্দু মাহনামা 'আরমোগান' (নভেম্বর ২০১৫) পৃষ্ঠা ২৪-২৬ থেকে অনুবাদ কাজী যুবায়ির মাহমুদ
সৌজন্যে : দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ

সফলতার চাবিকাঠি Reviewed by Rasel.scb on 9:22 PM Rating: 5 তুফান আসে যেন তার ধ্বংসযজ্ঞে সব ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ঢেউ আসে যেন পাল তোলা নায়ের মাঝিরা কূলে ভিড়তে পারে। বিজলি চমকায় যেন জমির বুক চিরে চারা গজিয়ে...

No comments: