ডা: এম এ হালিম খান
লিভারের প্রদাহকে বলে ‘হেপাটাইটিস’। এর প্রধান
কারণ ভাইরাস। ভাইরাস ছাড়াও প্যারাসিটামল,
অ্যালকোহল, মাশরুম (ব্যাঙের ছাতা), অ্যাফল্যাটক্রিন
থেকে হেপাটাইটিস হতে পারে। কিছু বিশেষ
ধরনের ভাইরাস মানবদেহের শুধু লিভারকে আক্রমণ
করে। এ গুলো হচ্ছেÑ হেপাটাইটিস-এ,
হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, হেপাটাইটিস-
ডি এবং হেপাটাইটিস-ই। এসব ভাইরাস ছাড়াও আরো
কিছু ভাইরাস, যেমনÑ সাইটোমেগালো ভাইরাস,
ইপস্টেইনবার ভাইরাস, হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস,
ইয়েলো ফিভার ভাইরাস মানবদেহের অন্য
অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করার পাশাপাশি লিভারও
আক্রমণ করে।
যেভাবে ছড়ায় : হেপাটাইটিস-এ ছড়ায় প্রধানত মুখ
কিংবা পায়ুপথ দিয়ে। একজনের মুখের লালার
মাধ্যমেও এটি অন্যের দেহে সংক্রমিত হতে পারে।
যৌন মিলন বা রক্তের মাধ্যমে এ ভাইরাস সংক্রমিত
হতে দেখা যায় না। অনেক সন্তানসম্ভাবা মা
হেপাটাইটিস-এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে
দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তাদের ধারণা, এ
ভাইরাসটি তাদের হবুসন্তানের দেহে সংক্রমিত
হবে। আসলে এ ভাইরাসটি এভাবে সংক্রমিত হয় না।
তবে গর্ভাবস্থায়ও এটি মা থেকে সন্তানের দেহে
সংক্রমিত হতে পারে। হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস
প্রধানত ছড়ায় রক্ত, রক্তজাত দ্রব্য, মুখের লালা ও যৌন
মিলনের মাধ্যমে। গর্ভাবস্থায় মা থেকে সন্তানের
দেহে এটি সংক্রমিত হতে পারে। হেপাটাইটিস-ডি
একটি অসম্পূর্ণ ভাইরাস। এটি হেপাটাইটিস-বি
ভাইরাসের সাথে একযোগ মানবদেহে আক্রমণ করে
এবং হেপাটাইটিস-বি যেভাবে ছড়ায় এটিও ঠিক
সেভাবে ছড়ায়। হেপাটাইটিস-ই প্রধানত মুখ কিংবা
পায়ুপথে ছড়ায়। লালা কিংবা রক্তের মাধ্যমে এটি
ছড়ায় না। গর্ভজাত সন্তানের এ ভাইরাস আক্রান্ত
হওয়ার কোনো ঝুঁকি নেই।
উপসর্গ : আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে কোনো লক্ষণ নাও
প্রকাশ পেতে পারে। তবে প্রথম পর্যায়ে ঠাণ্ডায়
কাঁপুনি, মাথাব্যথা, গা ম্যাজম্যাজ, ক্লান্তিভাব
প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। অনেকের বমি বমি
ভাব কিংবা ডায়রিয়াও হতে পারে। ধূমপায়ীদের
ধূমপানের প্রতি অনীহার সৃষ্টি হয়। বিড়ি-সিগারেট
বিস্বাদ লাগে।
পরবর্তী সময়ে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, জন্ডিস, চোখের
সাদা অংশ এবং ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া, গাঢ় বর্ণের
প্রস্রাব এবং ফ্যাকাশে বর্ণের পায়খানা প্রভৃতি
উপসর্গ দেখা দিতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি পেটের
ওপরের অংশ ব্যথা অনুভব করতে পারে। লিভার
সাধারণত আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। শিশুদের
ক্ষেত্রে প্লীহাও বড় হয়ে থাকে।
চিকিৎসা : সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই।
প্রতিরোধই এ রোগ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায়।
এমন হলে মরফিন বা ঘুমের ওষুধ সেবন করা উচিত নয়।
অ্যালকোহলে আসক্তরা অবশ্যই অ্যালকোহল গ্রহণ
থেকে বিরত থাকতে হবে। যেসব মহিলা
জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খান, তাদের সাময়িকভাবে পিল
সেবন বন্ধ করা উচিত।
লেখক : মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব
মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
No comments: